রমজান

ঈসা আল- মসীহের জীবন ও শিক্ষা পবিত্র ইঞ্জীল শরীফের মধ্যেই পাওয়া যায় ।কোরআনেও সংক্ষিপ্ত রূপে ঈসা মসীহ সম্পর্কে উল্লেখ আছে। নিম্নলিখিত পয়েন্টগুলি পবিত্র ইঞ্জীল থেকে নেওয়া হয়েছে:

১) ঈসা, পাক-রূহের শক্তিতে, তার পবিত্র জীবন জুড়ে নিয়মিত রোযা বা সিয়াম পালন করেছেন।
নবী ইয়াহিয়া হইতে তরিকাবন্দী গ্রহণের পর, ঈসা একটি দূরবর্তী নির্জন মরুভূমিতে গিয়েছিলেন। ৪০ দিন ও ৪০ রাত কোন রকম পানি ও খাবার গ্রহণ ছাড়া তিনি সিয়াম পালন করেন -এমনকি তিনি ইফতারও করেন নাই। এই অবিশ্বাস্য এই সিয়াম বা রোজা পালনকালীন সময়ে তিনি ইবলিশ দ্বারা পরীক্ষিত হয়ে গুনাহে প্রলোভিত হয়েছিলেন কিন্তু তিনি মাবুদের আনুগত্যে ছিলেন কোন গুনাহ করলেন না।--মথি (৪):১-১১, মার্ক ১: ১২-১৩, এবং লূক (৪):১-৪।

২) মসীহ ঈসা তাঁর সাহাবীদেরকেও রোজার বিষয়ে শিক্ষা দেন: 
মথি(৬):১৬-১৮--, ঈসা--তাঁর অনুস্বারীদেরকে ইবাদত/ প্রার্থনা, উপহার এবং রোযা সম্পর্কে শিক্ষা দেন। ঈসা মসীহের গোত্রের ইহুদীদেরও রোজা পালনের অনেক ঐতিহ্য ছিল। ইহুদীরা তাদের পূর্বপুরুষ নবী ইব্রাহিম ও নবী মুসার সময় হইতে ঐতিহ্যগতভাবেই রোজা বা সিয়াম পালন করে আসছেন --ঈসা মসীহের সময়েও ধার্মিকগণ সপ্তাহে ২ দিন সিয়াম পালন করতেন। (যা হিসাব করলে বছরে ১০০ দিন হয়)।  

ঈসা মসীহের নির্দেশনায় সিয়াম সাধনের জন্য  নির্দিষ্ট দিন বা সময় অন্তর্ভুক্ত ছিলনা।  তিনি বলেন, "যখনই আপনি রোজা রাখেন বা সিয়াম পালন করেন", অর্থাৎ তাঁর অনুস্বারীদের এই বিষয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। ঈসা মসীহের  ক্রুশে মৃত্যু হইতে পুনরুত্থানের পর (বেহেস্তে ফিরে যাওয়ার পর) সেই যুগের অনেক অনুস্বারীগণ সপ্তাহে ২ দিন রোজা রাখতেন বা সিয়াম পালন করতেন।   
ঈসা বলছেন,তোমরা যখন রোজা রাখ তখন ভণ্ডদের মত মুখ কালো করে রেখো না। তারা যে রোজা রাখছে তা লোকদের দেখাবার জন্য তারা মাথায় ও মুখে ছাই মেখে বেড়ায়। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে। কিন্তু তুমি যখন রোজা রাখ তখন মাথায় তেল দিয়ো ও মুখ ধুয়ো, যেন অন্যেরা জানতে না পারে যে, তুমি রোজা রাখছ। তাহলে তোমার বেহেস্তি পিতা, যিনি গোপনে উপস্থিত আছেন, কেবল তিনিই তা দেখতে পান। তোমার মাবুদ, যিনি গোপন সব কিছু দেখেন, তিনিই তোমাকে পুরস্কার দেবেন।-মথি(৬):১৬-১৮। 
মসীহ ঈসা তাদেরকে নিন্দা জানিয়েছে যারা রোজা রেখে অহংকার করে এবং মাবুদের বিরুদ্ধে তাদের গুনাহ স্বীকার করে না।  

৩) তাছাড়া সিয়াম পালনের মধ্য দিয়ে মসীহ ঈসা তাঁর আসল পরিচয়ও  প্রকাশ করেছেন: 
মথি(৯):১৪-১৭-- নবী ইয়াহিয়ার সাহাবীরা ঈসার কাছে এসে বললেন, “আমরা ও ফরীশীরা(ইহুদী আলেম/ঈমাম) এত রোজা রাখি, কিন্তু আপনার সাহাবীরা রোজা রাখেন না কেন?” জবাবে ঈসা তাঁদের বললেন, “বর সংগে থাকতে কি বরের সংগের লোকেরা দুঃখ প্রকাশ করতে পারে? কিন্তু সময় আসছে যখন বরকে তাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই সময় তারা রোজা রাখবে। 

মসীহ ঈসার জীবন ও শিক্ষা পর্যালোচনা করে আমরা দেখি যে তিনি অন্যান্য সাধারণ নবীদের মত নন ;
প্রথম মানব নবী আদম, যিনি বেহেস্তের মতোই খাবার পরিবেষ্টিত থাকা সত্ত্বেও মাবুদের অবাধ্য হয়ে শয়তানের প্রলোভনে গুনাহকে বেছে নিয়েছেন আর মসীহ ঈসা ৪০ দিন-রাত নির্জন মরুভূমিতে রোজা রাখাকালীন সময়ে শয়তান দ্বারা প্রলুব্ধ হয়েও মাবুদের বাধ্য থেকেছেন। 


নবী মুসার মতোও নন; তিনি মাবুদের কাছ থেকে প্রাপ্ত শরীয়তের বিধি-বিধান প্রচলন করেছেন আর মসীহ ঈসা  নিজ কতৃত্বে ও অধিকারে প্রার্থনা/ইবাদত ও রোজার মত নতুন শরীয়ত ঘোষণা করেছেন। 
নবী দাউদের মত ঈসা মসীহকে গুনাহের ক্ষমার লাভের জন্য রোজা রাখতে হয়নাই। 
অন্য নবীদের মত নয়; ঈসা তাঁর অনুস্বারীদের বলছেন তিনি থাকতে তাঁর অনুস্বারীদের রোজা রাখতে হবে না। মানুষ রোজা রাখে নিজেকে মাবুদের নিকটবর্তী হওয়ার উদেশ্যে। 


কিন্তু রূহুল্লাহ-ঈসার মধ্যেই মাবুদ মানুষের নিকটবর্তী --মাবুদের রূহ --রূহুল কুদ্দস তাঁর মধ্যেই বর্তমান। এই দাবি কোন কাফেরের নয়; স্বয়ং ঈসা নিজেই এই দাবি করেছেন। 


অন্য আর কোন নবীদের মত নয়; কিন্তু ঈসা তাঁর পুনরাগমনের জন্যই তাঁর অনুস্বারীদেরকে রোজা রাখতে বলেছেন। অন্য কোন কিতাবে ঈসা মসীহ ছাড়া অন্য কোন নবীর দ্বিতীয়াগমনের বিষয়ে নির্দেশনা নাই । 
কিন্তু কেন একমাত্র ঈসা ? তিনিই বা কেন এতই গুরুত্বপূর্ণ ?


রোজা বা সিয়াম মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকে দূরে সরিয়ে মাবুদের নিকটবর্তী হওয়ার এক অন্যতম উপায়। যখন আমরা ক্ষুদার্থ হই, তখন আমরা স্বরণ করতে পারি যে খাবার ও পানির চেয়ে আমাদের জীবনে সবচেয়ে বেশি দরকার আমাদের সৃষ্টিকর্তার যিনি এইসবের যোগান দেন।

 

হতে পারে আপনি মনে এই আশা রেখেই এই পবিত্র মাসে সিয়াম সাধনা করছেন; যাইহোক পাক-কিতাবের কালাম অনুস্বারে কেবল রোজা রেখে বা সিয়াম সাধনা করে মাবুদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না। কেবল রোজা আমাদের গুনাহ ও লজ্জা মুছে দিতে পারে না।সম্ভবত আপনি এই বছর রোজা রেখে , মাবুদের নিকটবর্তী হওয়ার যেই আশা নিয়ে আপনি শুরু করেছিলেন প্রকৃতপক্ষে আপনার হৃদয়ের গভীরে আপনি তা উপলব্ধি করতে পারেন নাই। 


কেবলমাত্র একজনই আমাদেরকে মাবুদের  কাছে ফিরিয়ে আনতে পারেন, "মসীহ ঈসা" মসীহ বা খ্রিস্ট অর্থই --এমন একজন যিনি বিশেষ উদ্দেশ্যে নির্বাচিত বা মনোনীত ।"ঈসা" নামের অর্থই নাজাতদাতা বা মাবুদ রক্ষা করেন। এই দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বেই আমাদের গুনাহ হইতে নাজাত বা পরিত্রান লাভ করতে হবে। মানুষকে গুনাহ হইতে পরিত্রান নাজাত দানের জন্য একমাত্র ঈসা মসীহই মাবুদের মনোনীত।   

 

ইহাই ক্রুশের আসল তাৎপর্য। ঈসা মসীহের অলৌখিক জন্ম, ক্রুশে মৃত্যুর ও পুনরুত্থানের বিষয়ে সু-স্পষ্ট দলিল-তৌরাতের ভবিষ্যৎবাণী, ইঞ্জীলের দলিল, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মানুষের সাক্ষ্য, ঐতিহাসিক দলিল ও আর্কিওলজিক্যাল দলিল দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পরও ইসলাম তা স্বীকার করে না। প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের মধ্যে তাঁর মা মরিয়ম ও তাঁর সাহাবীরা অন্যতম। 


এমন কি কোরআনে ৩ টি আয়াতে এই বিষয়ে সু-স্পষ্ট দলিল রয়েছে--সূরা আল-ইমরান(৩):৫৫ আয়াতে দুইটি আরবী শব্দ খুব ভালো করে লক্ষ্য করুন --إِنِّي مُتَوَفِّيكَ--এর অর্থ মৃত্যুবরণ করা আর --إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ--এর অর্থ পুনরায় জীবৎ হয়ে উঠা বা পুনরুত্থিত হওয়া। আর সূরা মরিয়ম(১৯):১৫ আয়াতে আল্লাহ বলেছে ৩৩ আয়াতে ঈসা নিজেই বক্তা--আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব। ইহা কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়--মাবুদের মহা পরিকল্পনার একটি অংশ !!

 

ঈসা বলেন:-পিতা আমাকে এইজন্য মহব্বত করেন, কারণ আমি আমার প্রাণ দেব যেন তা আবার ফিরিয়ে নিতে পারি। কেউই আমার প্রাণ আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবে না, কিন্তু আমি নিজেই তা দেব। প্রাণ দেবারও ক্ষমতা আমার আছে, আবার প্রাণ ফিরিয়ে নেবারও ক্ষমতা আমার আছে। এই দায়িত্ব আমি আমার পিতার কাছ থেকে পেয়েছি।” --ইউহোন্না(১০):১৭-১৮। 


ঈসা মসীহ তাঁত নিজের জীবন কুরবানী হিসাবেই দান করেছেন। এইজন্য ইঞ্জীল বলছে--এবং রক্তপাত না হলে গুনাহের মাফ হয় না।--ইবরানী(৯):২২। 

 

রোজা বা সিয়াম পালন ও এক প্রকার কুরবানী করা--খাবার ও পানি গ্রহণ হইতে বিরত থাকা, শরীরকে দুর্বল করে রিপুর তাড়না হইতে নিজেকে মুক্ত করে মাবুদের যোগ্য কুরবানী রূপে নিজেকে উৎসর্গ করা। মানুষ সাধারনত দৈনিক ৩ বেলা খায় আর রাতে ঘুমায়। রোজার সময় আমরা দেখি মানুষ ঠিকই ৩ বেলা খায় --সেহেরীতেও প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি আবার ইফতারেও অনেক বেশি খাবার খায়। দৈনন্দিন বরাদ্দের চেয়েও বেশি রমজানে মানুষ ভোগ করে --তাহলে সিয়াম বা বিরত থাকা কিভাবে হল ? এক বেলা বা দুই বেলা খাবার বর্জন করে সেই খাবারের পরিমানে অর্থ বা অন্য দ্রব্য দান করার মধ্যেই কেবল সিয়াম সাধনা পূর্ণ হইতে পারে। 
পাক কালামের কিছু আয়াতে বিষয়টা আরো স্পষ্ট করেছে--মাবুদ ঠিক করে রেখেছেন যে, প্রত্যেক মানুষ একবার মরবে এবং তার পরে তার বিচার হবে।ঠিক সেইভাবে অনেক লোকের গুনাহের বোঝা বইবার জন্য মসীহ্‌কেও একবারই কোরবানী দেওয়া হয়েছে। তিনি দ্বিতীয় বার আসবেন, কিন্তু তখন গুনাহের জন্য মরতে আসবেন না, বরং যারা তাঁর জন্য আগ্রহের সংগে অপেক্ষা করে আছে তাদের সম্পূর্ণ ভাবে নাজাত করবার জন্য আসবেন।--ইবরানী(৯):২৭-২৮। 


ঈসা মসীহ নিজেই মানবজাতির এক মহা সু-সংবাদ--আদম হইতেই অবাধ্যতার দরুন মানুষ সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ হইতে দূরে চলে গেছে --আর ঈসা মসীহই একমাত্র সেই অনুগ্রহ ও পবিত্র কুরবানী যাঁর মধ্য দিয়ে মানুষকে সৃষ্টিকর্তার সাথে পুনর্মিলন করিয়ে দিয়েছেন। 


একমাত্র ঈসা মসীহ ছিলেন বিচারের সব মানদণ্ডেই সম্পূর্ণ নিষ্পাপ ও পবিত্র। ১০০% মানুষ আবার ১০০% রূহ জগতে মানুষ রূপেই আসলেন কিন্তু চরিত্রে সম্পূর্ণ বেহেস্তিই রইলেন -আসমানের নিচে মানুষে মধ্যে তাঁর মত কেউ নাই একজনও নাই। নিজে সম্পূর্ণ নিষ্পাপ হয়েও মানুষের গুনাহের কাফ্ফারা শোধ করলেন ক্রুশে কুরবানী হয়ে, কবরে গেলেন কিন্তু কবর তাঁকে রাখতে পারেনাই--পুনরায় স্ব-মহিমায় পুনরুত্থিত হয়ে বেহেস্তেই ফিরে গেলেন আবার আসেবন। বাদ-বাকি সবাই কবরেই আছেন। অনেক নবী নিজের উম্মতকে রক্ষা করার জন্য বরং অন্যের প্রাণ নিয়েছেন, 'ঈসা 'নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেই মানুষকে গুনাহ হইতে নাজাত উপহার দিয়েছেন। মাবুদ নিজের ইচ্ছায় এই ব্যবস্থা করলেন যাতে মানুষ নাজাত লাভ করে। তাই ঈসা মসীহের উপর পূর্ণ ঈমানের মধ্য দিয়ে নতুন জন্ম লাভ না করলে কেউ বেহেস্তে যেতে পারে না। ২ করিন্থীয়(৫):১৪-২১, ইউহোন্না(৩):৫-২১। নাজাত বা পরিত্রান মানুষের জন্য একটি বেহেস্তি উপহার, সৃষ্টিকর্তার এক মহা অনুগ্রহ --আর ঈসা মসীহই সেই উপহার ও অনুগ্রহ মানব জাতির জন্য বেহেস্তি সু-সংবাদ, সৃষ্টিকর্তার মনোনীত একমাত্র নাজাতদাতা। ঈসা মসীহের উপর ঈমানের মধ্য দিয়েই কেবল নাজাত বা এ পরিত্রান লাভ সম্ভব !


এইবার নিজেকে প্রশ করুন; আপনি কোথায় ?
আপনি কি ঈসা মসীহকে অনুস্বরণ করেন ?
গুনাহ হইতে মন ফিরিয়ে তাঁর কুরবানীতে বিশ্বাস করেন যাতে নাজাত লাভ করেছেন ?
গভীর আগ্রহ নিয়ে ঈসা মসীহের পুনরাগমনের অপেক্ষা করছেন এএবং নাজাতের পূর্ণ আনন্দে আছেন ?
ঈসা মসীহের মধ্য দিয়ে যেই মাবুদ মানুষকে নাজাত দিয়েছেন তাঁর সন্তুষ্টি লাভেই রোজা রাখছেন ? 
অন্য কাহারো অনুস্বারী ?
নিজের ভাল কাজের মধ্য দিয়েই বেহেস্ত লেভার চেষ্টা করছেন ? 
বিচার দিবসের জন্য ভয়ে আছেন,কেননা আপনি আপনার নাজাতের বিষয়ে নিশ্চিত নন ? 
মাবুদকে খুশি করতেই রোজা রাখছেন, কিন্তু আপনি জানেন না তিনি আসলেই খুশি কি না ?